আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখন অলিখিত একটি নিয়ম ছিল যে, প্রতি বছর স্কুল থেকে একটি করে ম্যাগাজিন বের হবে। ওই ম্যাগাজিনে ছাত্রছাত্রীরা বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তাদের সৃষ্টিশীল লেখা প্রকাশ করবে। সেটি করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাষার উন্নয়ন ঘটত, নেতৃত্বের গুণাবলির চর্চা হতো, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের বন্ধুত্ব সৃষ্টি হতো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে দূরত্ব যেমন কমে যেত তেমনি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে লুকায়িত গুণাবলি, মেধা এবং সৃজনশীলতা আবিষ্কার করতে পারতেন, পরিচিত হতে পারতেন ওইসব শিক্ষার্থীর চিন্তাচেতনার সঙ্গে। এটি এক ধরনের ফরমেটিভ অ্যাসেসমেন্টও বটে, যেটি অনেকটাই প্রকৃত অ্যাসেসমেন্ট, প্রকৃত মূল্যায়ন। শুধু সামেটিভ অ্যাসেসমেন্ট দ্বারা একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মেধা ও দক্ষতা আবিষ্কার করা যায় না।
বর্তমান যুগে বিদ্যালয়গুলোতে অভিভাবক, বিদ্যালয় ও কমিটির অর্থনৈতিক শক্তি ও সামর্থ্য আগের তুলনায় বেড়েছে অনেক; কিন্তু মারাত্মকভাবে কমেছে সৃজনশীল ও সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলি। হাতেগোনা দুই-একটি বিদ্যালয় ছাড়া ম্যাগাজিন প্রকাশের কথা আমরা আর শুনি না। ভালো বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়ে বছরে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি ম্যাগাজিন আলাদা আলাদা প্রকাশিত হতো। আমাদের সময় বিদ্যালয় যতটা না উদ্যোগী ছিল তার চেয়ে বেশি আগ্রহী থাকতেন কিছুসংখ্যক শিক্ষক। তারাই শিক্ষার্থীদের উৎসাহ জোগাতেন, কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতেন ম্যাগাজিন প্রকাশ করার জন্য। আমরা চোখ বন্ধ করলে মানসচক্ষে দেখতে পাই এ বিপরীত চিত্র।
বর্তমান যুগে শিক্ষার্থীরা ভালো গ্রেডিং পাচ্ছে; কিন্তু পড়তে পারছে না বাংলা, ইংরেজি। নিজ থেকে লিখতে পারছে না তাদের চির পরিচিত কিংবা নিত্যদিন ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি নিয়ে। কেন? এসব লেখায় তাদের অভ্যাস নেই, এগুলো পরীক্ষায় আসে না, এগুলো ক্লাস বা কোচিং কোথাও আলোচিত হয় না। এ নিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক, সমাজ, কেউই মাথা ঘামাচ্ছেন না। কাজেই শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে সময় নষ্ট করবে কেন?
ম্যাগাজিন প্রকাশ করা এখন আর স্কুল চায় না, শিক্ষকরা চান না, অভিভাবকরা চান না, শিক্ষার্থী চাইবে কেন? তাদের তো ধারণা নেই, এগুলো করে কী হবে? তবে এগুলো যে তাদের জীবনে বহু কাজে লাগবে তা বোঝানোর দায়িত্ব তো শিক্ষক, অভিভাবক ও স্কুলেরই।
একটি ম্যাগাজিনে যখন কোনো শিক্ষার্থী কোনো লেখা দেবে তখন তাকে পাঠ্যবই ছাড়াও বাইরের অনেক কিছু পড়তে হয়। এর ফলে একদিকে যেমন বাড়ে তার সাধারণ জ্ঞান, অন্যদিকে তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। আর তার লেখা যখন ম্যাগাজিনে ছাপা হয় তখন সেটি এক ধরনের স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি পেলে তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় আরও কয়েকগুণ। তার লেখাটি দেখে এবং পড়ে বহু শিক্ষার্থী, অনেক শিক্ষক। ম্যাগাজিনের লেখা দেখে সবাই বিচার করার সুযোগ পায়, কমেন্ট করতে পারে এবং বিদ্যালয়ের সবাই একজন লেখক শিক্ষার্থীকে তখন চিনতে শুরু করে। ম্যাগাজিনে লেখার জন্য একজন শিক্ষার্থীর যে প্রস্তুতি, লেখার পর তার আত্মবিশ্বাস এবং বাস্তবধর্মী মূল্যায়ন জীবনের প্রকৃত সঙ্গী এবং সহায়ক। এ বিষয়টিকে কোনোভাবে উপেক্ষা করা যাবে না।
এ জন্য আমাদের বালিগন্জ জগদ্বন্ধু অ্যালমনি অ্যাসোসিয়েশন প্রয়াস এই নতুন ওয়েব ম্যাগাজিন শতবর্ষে অতিক্রম করেছে আমাদের ঐতিহ্যবাহী স্কুল। বহু কৃতি ছাত্র এই স্কুলের মুখ সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে । এই ম্যাগাজিন আপনাদের সকলের সুচিন্তিত মতামত ও মূল্যায়ন আমাদের এই প্রয়াসকে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ করবে ।