ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরীক্ষামূলক করোনা ভ্যাকসিন ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত সুস্থ আছে অক্সফোর্ডশায়ার কাউন্টির একটি পরিবারের ছয় সদস্য। ভ্যাকসিনটির হিউম্যান ট্রায়ালের প্রথম ধাপে ‘ডাবল সুরক্ষার’র যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা শুনে পরিবারটির সদস্যরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
একটি ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে কিছু মানুষকে সংশ্লিষ্ট রোগের সম্ভাব্য প্রতিষেধকটি দেয়া হয়, অন্যদের দেয়া হয় প্লাসেবো; এগুলো টিকার মতো দেখতে কিন্তু কার্যকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। কেউ জানতে বা বুঝতে পারেন না কাকে কী দেয়া হয়েছে।
এই পরিবারটির কথা জানা গেছে ব্যানবুরি এবং অক্সফোর্ডশায়ার-ভিত্তিক পত্রিকা ব্যানবুরি নিউজ থেকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেটি ভিনি এবং তার স্বামী টনির পাশাপাশি ভ্যাকসিনটি নিয়েছে তাদের চার সন্তান। সবাই কভিড-১৯ রোগের উপসর্গমুক্ত আছেন।
স্কুলশিক্ষিকা ভিনি ইতিমধ্যে কাজে ফিরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি টিম তাদের ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে টিকাটির কাযকারিতা ভালো বোঝা যায়। সেই নির্দেশনা মেনে তারা এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।
ভিনির পরিবারের সবাইকে প্রতিদিন একটি ই-ডায়রিতে নিজেদের শারীরিক অবস্থার কথা লিখে রাখতে হচ্ছে। কত মানুষের সঙ্গে তারা মেলামেশা করছেন দিতে হচ্ছে সেই তথ্য।
ভিনির ধারণা, তিনি এবং তার পরিবার এখনো ভাইরাসের সংস্পর্শে আসেননি; তবে কিছু দিন হলো বাইরের লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেছেন।
‘প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা কোথাও যাইনি। কিন্তু এখন বাচ্চাদের বলা হয়েছে স্কুলের তিন জন করে বন্ধুর সঙ্গে মিশতে। ’
‘তারা (গবেষকেরা) দেখতে চাইছেন আমাদের শরীর কেমন থাকে। আমরা একদম স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি। ’
প্রথম ধাপের ট্রায়ালে যা পাওয়া গেছে: ট্রায়ালের সঙ্গে যুক্ত গবেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, যাদের টিকাটি দেয়া হয়েছিল তাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে দেখা গেছে প্রতিষেধকটি ‘টি-সেলের’ জন্য যেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তেমনি ভাইরাস প্রতিরোধী কার্যকর অ্যান্টিবডিও তৈরি করছে।
এই দুটি বিষয়কেই গবেষকেরা ‘ডাবল সুরক্ষা’ বলে মন্তব্য করেছেন।
একজন মানুষ যখন কোনো ভাইরাসে সংক্রমিত হন, তখন শরীর ওই ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে রক্তে যে উপাদান তৈরি করে তাকে অ্যান্টিবডি বলা হয়। কভিড-১৯’র ক্ষেত্রে অনেকের শরীরে আপনা-আপনি অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। অনেকের আবার হচ্ছে না, এদের জন্যই মূলত টিকা দরকার।
একইভাবে আমাদের ‘অভিযোজিত’ রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘টি-সেল’।
অ্যান্টিবডি তৈরি হয় বি-সেল দ্বারা। টি-সেল কিছুটা অন্য রকম। এরা অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে ভাইরাসে সংক্রমিত মানবকোষকে ‘আক্রমণ’ করে। হাম এবং সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এই সেলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
একজন মানুষ যখন সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠেন, তখন তার শরীরে সে সেল থেকে যায়, তাকে চিকিৎসকেরা ‘মেমোরি’ সেল বলেন। ভাইরাস আবার আমাদের আক্রমণ করলে এরা প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত থাকে।