সিলেটে দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলেও এর প্রভাব পড়েছে ইন্টারনেটে। নগর থেকে বিদ্যুতের খুঁটি সরালে প্রায় ৩০টি ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। এতে বিপাকে পড়তে পারে গ্রাহকরা।প্রায় তিন বছর আগে সিলেট নগরকে তারের জঞ্জালমুক্ত করতে ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প সিলেট বিভাগ, সিলেট’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় পিডিবি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেয় সিটি কর্পোরেশন। নগরীর প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৫৫ কোটি টাকা।প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নগরীর শাহজালাল মাজার গেট এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন চালু হয়েছে। বাকি অংশের কাজও চলছে পুরোদমে। কিন্তু এ কাজ শুরু থেকেই বিকল্প পথ বের করে দিতে দাবি জানাচ্ছে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ক্যাবল ব্যবসাীয়রা।এদিকে কাজ শুরুর আগে ক্যাবলগুলো এক মাসের মধ্যে বিকল্প পথে নিতে তাদের একটি নোটিশ দেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো বিকল্প ব্যবস্থা পাচ্ছে না। এ নিয়ে মেয়রের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে।ব্যবসায়ীরা জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী পিডিবি ও সামিট গ্রুপের শর্ত অত্যন্ত জটিল। এ শর্ত মেনে কাজ করলে মাত্র কয়েকটি পয়েন্ট দেয়া হবে। যেখান থেকে তাদের ক্যাবল গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানো যাবে না। মাটির ওপর দিয়েই ক্যাবল টানতে হবে। প্রকল্পের কাজ শুরুতে মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন ওই কোম্পানিগুলোকে দিয়েই বিকল্প ব্যবস্থা করাবেন। কিন্তু সেই নিশ্চয়তা এখনো তারা পাননি।শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সিসিক জানায়, পিডিবি’র বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আম্বরখানা ইলেকট্রিক সাপ্লাই থেকে চৌহাট্টা পয়েন্ট ও সিটি পয়েন্ট হয়ে সিলেট সার্কিট হাউস পর্যন্ত, চৌহাট্টা পয়েন্ট থেকে রিকাবিবাজার হয়ে নবাব রোডের বিপিডিবির বাগবাড়ি অফিস পর্যন্ত এবং পূর্ব জিন্দাবাজার থেকে জেল রোড পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ওভারহেড বৈদ্যুতিক তারগুলো ভূগর্ভে স্থানান্তরের কাজ শেষ হয়েছে। এসব এলাকার সব বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ওভারহেড তারগুলো অপসারণ করবে পিডিবি।খুঁটিগুলো সরালে ইন্টারনেটের ক্যাবলগুলোও অপসারিত হবে। ফলে ইন্টারনেট সংযোগ বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে বিটিআরসি, এনটিটিএন ও আইএসপি’র সঙ্গে কয়েক দফা সভা করেও কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এ ব্যাপারে সিসিকের কোনো দায়িত্ব নেই বিধায় আইএসপিদের আগামী সাতদিনের মধ্যে এনটিটিএন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য সংশ্লিষ্টরা দায়ী থাকবে।সিলেট ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহবায়ক দেবব্রত পাল বলেন, এ প্রকল্পের শুরু থেকেই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করে আসছি। তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সামিটের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন করেননি। আমরা সামিটের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা প্রতিটি সংযোগের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। তবে গ্রাহকদের এক হাজার টাকায় সংযোগ দিচ্ছি।তিনি বলেন, সব আইএসপি’র অফিস জিন্দাবাজারে। সেখান থেকেই সেবা দেয়া হয়। জিন্দাবাজারের লাইন কাটলে পুরো নগরীর ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাবে।সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, আমরা বারবার বলেছি। তারা বিকল্প ব্যবস্থা না করলে আমাদের কিছুই করার নেই। এরপরও মেয়র চেষ্টা করেছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ক্যাবল সরাতে হবে। মার্চেই সড়কের কাজ শেষ করতে হবে।তিনি বলেন, যেহেতু প্রকল্পটি পিডিবির। তাই আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো পিডিবি ও বিটিসিএলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।